Thursday, August 25, 2022
পরিবেশ সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন
Wednesday, August 24, 2022
পরিবেশ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত পূর্ণনাম
Saturday, August 20, 2022
জলাভূমি// Wetlands
= প্রধান প্রাকৃতিক জলাভূমি সাত ধরনের যেমন -
(1) সামুদ্রিক জলাভূমি (যেমন কচ্ছ প্রণালী [Gulf of Kachchh])
(3) অভ্যন্তরীণ জলাভূমি (যেমন মধ্যপ্রদেশের ভোজ জলাভূমি)
(4) উপকূলীয় জলাভূমি (যেমন কেরালার অষ্টমুদি, ওড়িশার ভিতরকণিকা জলাভূমি)
(5) নদীসংলগ্ন জলাভূমি (যেমন পূর্ব কলকাতা জলাভূমি)
(6) স্বাদুজলের জলাভূমি (যেমন মণিপুরের লোকটাক হ্রদ)
(7) লবণাক্ত জলের জলাভূমি (যেমন রাজস্থানে সম্বর হ্রদ)
(৪) পার্বত্য এলাকার জলাভূমি (যেমন মানস সরোবর, জম্মু কাশ্মীরের সোমোরিরি এবং উলার)।
পরিবেশ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ও কাজ // Instruments and their works related to environment
Sunday, August 14, 2022
দেশান্তর বা প্রচরণ বা পরিব্রাজন বা মাইগ্রেসন (Migration) // Transhumance
Saturday, August 13, 2022
বনহনন (Deforestation) সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
= প্রধানত মানুষ তার বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক চাহিদা মেটানোর জন্য নির্বিচারে বনভূমির কাঠ দীর্ঘ দিন ধরে কেটে নিলে অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের যে ক্ষতি হয় তাকে বনহনন বা অরণ্যের ধ্বংসসাধন (Deforestation) বলে।
২) বনহননের কারণ কী?
= পৃথিবীব্যাপী বনভূমির আয়তন ক্রমশ কমে যাওয়ার কারণগুলিকে দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন— (1) প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বনভূমির বিনাশ এবং (2) আর্থ-সামাজিক কারণে অরণ্যের বিলুপ্তি।
(1) প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বনভূমির বিনাশঃ
(a) দাবানল : দাবানল বনভূমি বিনষ্ট করে। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া প্রভৃতি মহাদেশের ব্যাপক বনভূমি দাবানলের কবলে স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। সম্প্রতি (2019) ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকায় ব্যাপক দাবানলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। দাবানল প্রভাবিত অঞ্চলগুলিতে নতুন বনভূমি সৃষ্টির জন্য বৃহদায়তনে বৃক্ষ রোপণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
(b) সামুদ্রিক ঝড় : টাইফুন, সুনামি (Tsunami), টর্নেডো প্রভৃতি ভয়ংকর ঝড় প্রতিবছর বহু হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করে।
(c) ধস : পাহাড়ি অঞ্চলে ধসের ফলে সরলবর্গীয় ও মিশ্র বনভূমির অন্তর্গত অরণ্য প্রতিবছর নষ্ট হয়। অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্প ইত্যাদি নানা কারণে ধস হতে পারে। 2015-তে নেপালে, 1950 সালে অসম (আসাম) ভূমিকম্পের কারণে হিমালয়ের বিস্তৃত অঞ্চলে প্রচুর বনভূমির ক্ষতি হয়।
(d) অ্যাসিড বৃষ্টি : বিশ্বের শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির আশপাশে সালফিউরিক অ্যাসিড বৃষ্টির ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, বর্জ্য, রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়। এর ফলে বনাঞ্চলের ক্ষতি হয়।
(e) অগ্ন্যুৎপাত : অগ্ন্যুৎপাতের আঞ্চলিক ঘটনা সেই অঞ্চলে বনভূমি ধ্বংসের জন্য দায়ী। উদাহরণ হিসেবে ভারতে ব্যারেন দ্বীপের সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।
(২) আর্থ-সামাজিক কারণে অরণ্যের অবলুপ্তি :
FAO, 2015 সালে বনভূমির আয়তন-সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করে তার ভিত্তিতে দেখা যায় যে, এই সময়ে পৃথিবীতে মোট বনভূমির পরিমাণ ছিল 399 কোটি হেক্টর, 2000 সালে 408.5 কোটি হেক্টর এবং 1990 সালে 416.8 কোটি হেক্টর। অর্থাৎ বিগত 25 বছরে প্রায় 17.8 কোটি হেক্টর জমি থেকে অরণ্য চিরকালের মতো হারিয়ে গেছে।
(a) কৃষিজমির ক্রমবর্ধমান চাহিদা ঃ
FAO-এর হিসেব অনুসারে, প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে গড়ে প্রায় 25 লক্ষ হেক্টর জমি চাষ-আবাদের আওতায় আনা হয়। এই জমির প্রায় সবটাই বনভূমিকে ধ্বংস করে আহরণ করা হয়ে থাকে।
(b) মানুষের আর্থ-সামাজিক লক্ষ্যে পৌঁছোনোর তাগিদ : মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পথ প্রশস্ত করতে দরকার শিল্প, যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামোগত সুবিধা। সেজন্য দরকার প্রচুর সস্তা জমি, যা বনভূমি ধ্বংস করে সহজেই পাওয়া যায়।
(c) বাসস্থানের চাহিদা : সাম্প্রতিককালে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় 10 কোটি লোক বাড়ছে । যার অধিকাংশই এশিয়া ও আফ্রিকার বিকাশশীল দেশগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য ন্যূনতম বাসস্থানটুকু জোগান দিতে হলে প্রতি বছরে কয়েকশত বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বসতি স্থাপনের প্রয়োজন হয়, এবং সে-কারণেও বনভূমি ক্রমশ অবলুপ্ত হয়ে চলেছে।
(d) জ্বালানির চাহিদা : পৃথিবীর বিকাশশীল দেশগুলিতে জ্বালানির অতিরিক্ত দাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ফলে দরিদ্র জনসাধারণ জ্বালানির জন্য বনের গাছপালার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে এবং বনভূমি ধ্বংস হয়।
(e) স্থানান্তরী কৃষির প্রভাব : পৃথিবীর উপজাতি অধ্যুষিত অধিকাংশ অঞ্চলে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বিচরণশীল যাযাবরী ধরনের স্থানান্তরী কৃষির প্রচলন দেখা যায়। উত্তর-পূর্ব ভারতে এ-ধরনের কৃষিকাজ জুম চাষ নামে পরিচিত। অপরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে বনভূমি ধ্বংস করে, জুম চাষের জমি আহরণ করা হয়।
(f) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ : দানাশস্যের চাহিদা যেমন জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে, তেমনি দুধ, ঘি, মাখন, পনির, মাংস, পশম, চামড়ার চাহিদাও একইভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পশুচারণের পরিধি বিস্তৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বনভূমির আয়তনও দ্রুতগতিতে হ্রাস পাচ্ছে।
(g) কাষ্ঠশিল্পের প্রয়োজনে কাঠের চাহিদা : মানুষের নানাকাজে কাঠের চাহিদা বাড়ছে বলে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে।
(h) অরণ্যের যথেচ্ছ ব্যবহার : মানুষের অদূরদর্শিতা ও লোভের কারণে কচি, শিশু, অপরিণত গাছ যেমন নির্বিচারে মারা পড়ছে, একইভাবে পরিণত গাছও অপরিকল্পিতভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অসম ও উত্তরবঙ্গের বিশাল অরণ্যভূমি এই ভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।
৩) বর্নভূমি ধ্বংস হলে পরিবেশের কী সমস্যা হয়?
=বনভূমি বিলুপ্ত হওয়ার সঙ্গে জড়িত সমস্যাগুলি হল-
(1) ভূমিক্ষয়ের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস : ওয়ার্লড ওয়াচ ইন্সটিটিউটের (World Watch Institute) মতে পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় 7700 কোটি টন মাটি ক্ষয় হচ্ছে। মাটিকে উর্বরতা জোগায় যে পুষ্টিমৌলগুলি (nutrients), যেমন – নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফার, পটাশিয়াম, লোহা, তামা, দস্তা, আয়োডিন ইত্যাদি সেগুলিও একইসঙ্গে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। ফলে জমি রিক্ত হয়ে উঠছে। অনুর্বর জমিকে চাষযোগ্য করার সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। মাটির এই ব্যাপক ক্ষয়ের পেছনে রয়েছে অপরিকল্পিতভাবে গাছপালা কেটে ফেলার অদূরদর্শী কাজ।
(2) বন্যা ও খরার প্রকোপ বৃদ্ধি : বনভূমি বিনষ্ট হলে নদীখাতে অতিরিক্ত পলি জমা হয়। ফলে নদীর গভীরতা কমে যায়। বর্ষার উদ্বৃত্ত জল, তখন নদীর পক্ষে আর বহন করা সম্ভব হয় না। নদীতে বন্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে বনভূমি বাতাসে যে জলীয় বাষ্প জোগান দেয়, বনভূমি ধ্বংস হলে, সেই জোগান ব্যাহত হয়, বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়, খরা দেখা দেয়।
(3) মরুভূমির প্রসার : বায়ু ও মাটিতে গাছপালা যে আর্দ্রভাব বজায় রাখে, গাছপালার ঘনত্ব হ্রাস পেলে সেই আর্দ্রতা কমে যায়। মরুসংলগ্ন অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই মরুভূমির আয়তন প্রসারিত
হয় বা অন্যান্য জায়গায় অনাবৃষ্টির প্রভাবে মরুসদৃশ অবস্থার (desertification) সৃষ্টি হয়। প্রসঙ্গত, ভারতের পরিবেশ মন্ত্রক United Nations Convention to Combat Desertification-কে মরুকরণ সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতে লক্ষ করা যায় যে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশের বেশি এলাকা মরুকরণ—জমির অবক্ষয়—খরা (DLDD অর্থাৎ Desertification—Land Degradation-Drought)-র সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
(4) বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি ও পৃথিবীর তাপীয় ফলের পরিবর্তন: বনভূমি ধ্বংস হলে বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণায়ন (global warming) ও জলবায়ু পরিবর্তনের (climate change) সমস্যা বাড়ে।
(5) পাহাড়ি অঞ্চলে ধসজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। কারণ বনভূমির অভাবে মাটি উদ্ভিজ্জের সুরক্ষা হারায়।
(6) পতিত জমির পরিমাণ বাড়ে। কেননা বনভূমি না থাকলে মাটিতে পুষ্টিমৌলের জোগান কমে।
(7) জীববৈচিত্র্য (biodiversity) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ বনভূমি হল অসংখ্য কীট-পতঙ্গ- পাখি-সরীসৃপের আবাস স্থল।
(8) চেরাই কাঠের (sawn wood) জোগান কমে। কেননা বনভূমিই হল কাঠের আদি ও অকৃত্রিম উৎস।
(9) প্লাস্টিক, পলিথিন-জাতীয় জৈব-পচনবিমুখ (non-biodegradable) পদার্থের ব্যবহার বাড়ে। ফলে বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে।
(10) পরিবেশ দূষণের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। কারণ বনভূমির দূষণ নিরোধক ব্যবস্থা বনহননের সঙ্গে সঙ্গে বিনষ্ট হয়।
৪) বনসম্পদ সংরক্ষণ করার উপায় কী বা বনভূমির হ্রাস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়গুলি কী কী ?
= বনসম্পদ সংরক্ষণ করা ও বনভূমির হ্রাস নিয়ন্ত্রণ করার প্রধান উপায়গুলি হল—
(1) বনসৃজন : চিরাচরিত বা উন্নত পদ্ধতিতে বনভূমি সৃষ্টি করে, বৃক্ষরোপণ করে বনসম্পদের জোগান অব্যাহত রাখা যায়। যেমন— যৌথ বন ব্যবস্থাপনা (Joint Forest Management) পদ্ধতি, কৃষি বনসৃজন, সামাজিক বনসৃজন পদ্ধতি।
(2) নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ : ছাগল, মেষপ্রভৃতি চারণ করানোর জন্য পশুচারণ ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করা দরকার।
(3) উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার ব্যবস্থার প্রবর্তন : জমির অবস্থান, মাটির চরিত্র এবং জমির অন্যান্য বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জমিকে পরিকল্পনা অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে, জমির ব্যবহার (Land use) নির্দিষ্ট করা দরকার।
(4) পতিত জমিতে বনসৃজন : এই পদ্ধতিতে শুধু যে জমির উপযোগিতা বৃদ্ধি পায় তাই নয়, পতিত জমি (Wasteland) থেকে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। জমির অর্থনৈতিক মান উন্নত হয়।
(5) কীটপতঙ্গ এবং রোগ নিবারণ : কীটপতঙ্গের আক্রমণে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে বনভূমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। উদ্ভিজ্জের সুরক্ষার জন্য কীটপতঙ্গ, রোগ প্রতিহত করা দরকার।
(6) হ্যাবিট্যাট সংরক্ষণ ও খাদ্যের জোগান : সংরক্ষিত বনভূমি, অভয়ারণ্য, মৃগদাব প্রভৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে উদ্ভিজ্জ ও অরণ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
(7) সুলভ পরিবেশবান্ধব জ্বালানির বন্দোবস্ত : সুলভ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির বন্দোবস্ত করে বিকাশশীল দেশগুলিতে জনসাধারণকে কাঠের মতো সহজ সস্তা জ্বালানি ব্যবহার করা থেকে বিরত করা যায়। ফলে বনভূমি ধ্বংস হওয়ার হার কমে।
(৪) উপযুক্ত তত্ত্বাবধান : বনভূমি সংরক্ষণের কাজ সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করা দরকার। এ ব্যাপারে পুলিশ, প্রশাসন ও বনরক্ষকদের মধ্যে সঠিক সংযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
(9) কাঠের বিকল্পের সন্ধান : উপযুক্ত বিকল্প ছাড়া কাঠের ব্যবহার কিছুতেই কমানো যায় না। সুতরাং কাঠের কার্যকর বিকল্প চাই যা উপভোক্তা ও পরিবেশ উপযোগী হবে।
(10) অপচয় কমানো ও নিয়ন্ত্রিতভাবে কাঠ কাটা : কাঠ ও কাঠজাত সম্পদের অপচয় নিবারণ করে স্বাভাবিক উদ্ভিজ্জ ও বনভূমিকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে বাঁচানো যায়।
(11) দাবানল নিয়ন্ত্রণ : দাবানলের মতো ব্যাপক প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ করে বনভূমি সংরক্ষণ করা যায়। এ কাজে মহাকাশে স্থাপিত হওয়া কৃত্রিম উপগ্রহগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৫) কৃষি বনসৃজন বা Agro-Forestry কাকে বলে?
= FAO-এর মত অনুসারে কৃষকের নিজের অধিকারভুক্ত কৃষি বা পতিত জমিতে কৃষিফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কাঠ, সবুজ সার, ওষুধ, ছায়া, ফলমূল ইত্যাদি আহরণের জন্য গাছপালা লাগিয়ে যে বনভূমি গড়ে তোলা হয়, তাকে কৃষি-বনসৃজন বা কৃষি অরণ্য বা অ্যাগ্রো ফরেস্ট্রি (Agro-Forestry) বলে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক উৎপাদক থেকে সংগঠকে পরিণত হয়।
৬) কৃষি বনসৃজনের সুবিধা কী কী?
= কৃষি বনসৃজনের মাধ্যমে যে সমস্ত প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় বা যে সমস্ত সুবিধা ভোগ করা যায়, সেগুলি হল—
(1) অব্যবহৃত, পতিত, পরিত্যক্ত ও সাধারণভাবে চাষবাসের অনুকূল নয় এমন জমিকে অর্থনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়, উৎপাদনশীল করা যায়।
(2) ভূমিক্ষয় নিবারণ করা যায়।
(3) কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়। কারণ কৃষি ফসল ছাড়াও ফলমূল, কাঠ ইত্যাদি বিক্রির মাধ্যমে কৃষকের আয় বাড়ানোর সুযোগ হয়।
(4) ছদ্ম বেকারত্ব কমে। কৃষকের পরিবারভুক্ত লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
(5) জমিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়ে।
(6) জমিতে অন্যান্য সুষম পুষ্টিমৌল সরবরাহের পরিমাণ বাড়ে।
(7) জ্বালানির প্রয়োজন মেটে।
(৪) নিজের প্রয়োজনমতো কাঠ কৃষক নিজেই উৎপাদন করতে সমর্থ হয়।
(9) বাজারে কাঠের জোগান বাড়ে। ফলে একদিকে কাঠের দাম
কাঠের জন্য বনভূমি ধ্বংস করার প্রবণতা কমে।
নাগালের মধ্যে থাকে এবং অন্যদিকে
(10) ভেষজ গাছগাছড়ার জোগান বৃদ্ধি পায়। ওষুধ শিল্পে কাঁচামালের অভাব কমে।
(11) পশুখাদ্যের জোগান বৃদ্ধি পায়।
(12) দূষণ প্রতিরোধ করা যায়।
(13) প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষিত হয়।
৭) কৃষি বনসৃজনের অসুবিধা কী কী?
(1) কৃষি বনভূমি গড়ে তোলার জন্য অনেক সময় লাগে (long gestation period)। ফলে কৃষকের তাৎক্ষণিক লাভের সুযোগ কম।
(2) অনেকের মতে ইউক্যালিপটাস জাতীয় গাছ মাটির রস বেশি মাত্রায় শোষণ করে নেয়। ফলে মাটি রুক্ষ হয়ে পড়ে।
(3) সঠিক প্রজাতির গাছ বাছাই করা না হলে, জমি ছায়াঘন হয়ে পড়ে। সে কারণে স্বাভাবিক কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
(4) কৃষি বনসৃজনের জন্য উদ্ভিদের কোনো বিদেশি (exotic) প্রজাতি রোপণ করা হলে, স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে তার অভিযোজন নাও হতে পারে। ওই নতুন উদ্ভিদকে আশ্রয় করে ক্ষতিকর পোকার (pest) আমদানি হতে পারে।
৮) কৃষি বনসৃজনের প্রকৃতি কী?
কৃষি বনসৃজন বহু উদ্দেশ্যসাধক (multipurpose) প্রকল্প। বনভূমিকে রক্ষা করা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা, কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা, সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সংযোজন করা ইত্যাদি নানা সুবিধার কথা ভেবেই, কৃষি বনসৃজন প্রকল্পের শুরু। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক শুধু অপরের ভোগের জন্য সামগ্রী উৎপাদন করে না। কৃষক নিজে সংগঠকের (entrepreneur) ভূমিকাও পালন করে।
৯) কৃষি বনসৃজনের উপযুক্ত জায়গা কী কী?
= কৃষিজমির আল, আইল বা ঘের বরাবর কৃষি বনভূমি সৃজন করা যায়। চা বাগানের মধ্যে ছায়া প্রদায়ী গাছ লাগানো যায়। এ ছাড়া, পতিত জমি বা বাড়ির সীমানা বরাবর বা বাড়ির পেছনের ফাঁকা জমিতেও কৃষি-বনসৃজন করা যায়।
১০) কৃষি বনসৃজনের উপযুক্ত গাছগুলি কী কী?
জমির অবস্থান অনুসারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো যায়, যেমন,
(1) জমির বিস্তৃত আল, ঘের বা বাঁধ বরাবর সুবাবুল, ইউক্যালিপটাস, সোনাঝুরি, আকাশমণি, নিম, সুপারি, তাল প্রভৃতি।
(2) বাগানে কলা, লেবু, কুল, কাঁঠাল, আম, নারকেল, জাম, ফলসা, চালতা ইত্যাদি।
(3) পতিত জমিতে নিম, কদম, সোনাঝুরি, শাল, মেহগিনি, শিশু জাতীয় বড়ো গাছ বা বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন মসুর, অড়হর বা বাদাম, ভুট্টা ইত্যাদি শস্য।
(4) কৃষিজমির কাছাকাছি বা সবজি বাগানে ধঞ্চে গাছ।
(5) বাড়ির সীমানা বরাবর সুপারি, সাবু, তাল, ইউক্যালিপটাস, শিশু, আকাশমণি প্রভৃতি।
(6) পুকুরের ধারে নারকেল, তাল, সুপারি, চালতা, আম, ফলসা প্রভৃতি।
(7) সুবিধামতো জায়গায় বাসক, নয়নতারা, কালমেঘ প্রভৃতি।
(8) চা, কফি, কোকো বাগানে শিরীষ, কৃষ্ণচূড়া, কলা, ভুট্টা ইত্যাদি।
১১) সামাজিক বনসৃজন বা সোস্যাল ফরেস্ট্রি কাকে বলে?
= সামাজিক বৃক্ষরোপণ পরিকল্পনা অনুসারে নানা ধরনের অব্যবহৃত ও পতিত জমিতে অরণ্য সৃষ্টির উদ্যোগকে সামাজিক বনসৃজন বা সোস্যাল ফরেস্ট্রি (Social Forestry) বলে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশ, অর্থনীতি ও মানুষ উপকৃত হয়।
১২) সামাজিক বনসৃজনের সুবিধাগুলি কী কী?
= (1) সামাজিক বনসৃজনের মাধ্যমে অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত ও পতিত জমি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যায়। ফলে জমির অর্থনৈতিক উপযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
(2) অতিরিক্ত বনভূমি সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে ভূমিক্ষয়জনিত সমস্যা নিবারণ করা যায়।
(3) জ্বালানির জোগান বৃদ্ধি করা যায়।
(4) কৃষি, বনায়ন, পশুচারণ ও অন্যান্য উপজাত সামগ্রী উৎপাদনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা যায়।
(5) পশুখাদ্যের জোগান বৃদ্ধি করা যায়।
(6) স্থানীয় জনগণের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে।
(7) স্থানীয় লোকজনের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
(৪) কাঠ ও অন্যান্য বনজাত দ্রব্যের জোগান বৃদ্ধি পায়।
(9) ফলমূল উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দেশে খাদ্য পরিস্থিতি অনুকূল হয়।
(10) ঝড়ঝঞ্ঝাজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষা বলয় (shelter-belts) ও শহরাঞ্চলে নগর বনায়ন (urban forestry) গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
(11) অতিরিক্ত গাছের পাতা খাদ্য হিসেবে জোগানের মাধ্যমে নিবিড় পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
(12) বিভিন্ন ধরনের গাছপালার সমন্বয়ে সুন্দর, মনোরম নিসর্গ (landscape) সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
(13) বাড়িঘর নির্মাণ, কৃষি যন্ত্রপাতি, গোরুর গাড়ি ও গ্রামীণ যানবাহন নির্মাণ, এমনকি বেড়া দেওয়ার জন্যও সস্তায় কাঠ সরবরাহ করা যায়।
(14) গাছপালার সঙ্গে মানুষের নিকট সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গাছপালা লাগানোর অভ্যাস তৈরি হতে পারে।
১৩) সামাজিক বনসৃজনের উপযুক্ত স্থানগুলি কী কী?
উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র/ Satellite Image and Topographical Map
উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র Satellite Image and Topographical Map ১. TCC - এর পুরো নাম কি? = True Colour Composite। ২. FCC - এ...
-
ভারত সম্পর্কিত ২৫ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর....বিভাগ - ১/ 25 Important Questions and Answers about India....Part - 1 ১. ভার...
-
উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র Satellite Image and Topographical Map ১. TCC - এর পুরো নাম কি? = True Colour Composite। ২. FCC - এ...
-
পরিবেশ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন.../ Some brief questions about the environment... 1. ধস নামার দুটি কারণ দাও। = প্রচুর বৃষ্টিপ...